একরকম
নিরুপায় সময় পার করছেন সময়ের অন্যতম কণ্ঠতারকা ন্যান্সি।
নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় থিতু হয়েছেন মাস চারেক। প্রত্যাশা ছিল স্টেজ
শো এবং রেকর্ডিং ব্যস্ততা বাড়বে দ্বিগুণ। কিন্তু না। একদমই তেমনটা ঘটছে
না। উল্টো প্রায় বেকার সময় পার করছেন তিনি। বিশেষ করে স্টেজ শো নিয়ে দারুণ
বিপাকে আছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ শিল্পী। ন্যান্সি জানান,
মূলত গেল বছর অক্টোবর থেকেই তার স্টেজ শোকেন্দ্রিক বিরামহীন ব্যস্ততায় নেমে
এসেছে অবাক নীরবতা। প্রতিনিয়ত স্টেজ শো’র অফার পাচ্ছেন। একই সঙ্গে সেসব
বাতিল হয়ে যাচ্ছে অস্পষ্ট কারণে। ন্যান্সি বলেন, গেল অক্টোবর থেকে শতাধিক
স্টেজ শো চূড়ান্ত করেছি। কিছু শো’র জন্য এডভান্স নিয়েছি। মিউজিশিয়ানদের
নিয়ে আমরা প্র্যাকটিস করেছি। অতঃপর শো’র আগের রাতে আয়োজকরা জানাচ্ছেন, আপু
সরি। কালকের শোটা বাতিল করা হয়েছে।
সাত-আট
মাস ধরে আমি শুধু শো ধরছি আর বাতিলের খবর শুনছি। একজন শিল্পীর জন্য এটা যে
কি পরিমাণ সম্মানহানিকর সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। তাছাড়া আমি তো ভাই
গানটাকে পেশা হিসেবেই নিয়েছি। গ্রামের সব ফেলে ঢাকায় এসেছি এই গানের জন্যই
তো। এখন গানই যদি না গাইতে পারি, তাহলে আমি খাবো কি? ঢাকাতেইবা থাকবো কেন?
আমি জানি না, এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটছে? নাকি সবার বেলাতেই এমনটা
হচ্ছে। ন্যান্সি আরও বলেন, তবে এভাবে শতাধিক শো বাতিল হলেও দু-একজন আয়োজক
অব দ্য রেকর্ডে আমাকে বলেছেন যে কথা, সেটা শুনে খুব ভেঙে পড়েছি। নিরুপায়
হয়ে বহু কেঁদেছি। কাঁদছি এখনও। মনে হচ্ছে আমি এমন এক দেশের মানুষ, যে দেশে
মনের কথা মুখে বলাটাও পাপ। আর সেই পাপের প্রায়শ্চিত্তটাই এখন আমি করছি।
ন্যান্সিপ্রিয় এবং রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গেল বছর
২২শে অক্টোবর থেকে টানা প্রায় এক মাস মিডিয়ায় ছোটখাটো একটা ঝড় বয়ে যায়। যে
ঝড়ের কারণ ন্যান্সির ফেসবুক স্ট্যাটাস। ফেসবুকে চাঁচাছোলা সেই রাজনৈতিক
স্ট্যাটাসের কারণে ন্যান্সি প্রায় মাস দুয়েক ভুগেছেন পুলিশি হয়রানিতে।
বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া নিজ দপ্তরে ডেকে নিয়েছেন ন্যান্সিকে।
জানিয়েছেন সাধুবাদ। দিয়েছেন আশীর্বাদ। ব্যাস হয়ে গেল। ন্যান্সির ভাষ্যমতে, এ
ঘটনাটি তখন তার জীবনের জন্য অনেক সুখের অভিজ্ঞতা ছিল। তবে সেই ক্ষণিক
সুখের বিনিময়ে এখন অনেক চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। কারণ, গেল আট মাসে হাতেগোনা
কয়েকটি স্টেজ শো করেছেন। বাকি সব শো বাতিল করা হয়েছে তার ওই স্ট্যাটাসের
রেশ ধরেই। না। এখানেই ঘটনার রেশ শেষ নয়। শতভাগ পরাজয়ের গ্লানি কণ্ঠে নিয়ে
গতকাল ন্যান্সি জানান আরও নতুন কিছু। তিনি জানান, গতকালও তিনি একজন
প্রফেশনাল আইটি বিশেষজ্ঞ ডেকে ‘এনএম ন্যান্সি’ নামে নতুন একটি ফ্যান পেইজ
খুলেছেন। কারণ, আগেরটি হ্যাক হয়েছে। গেল আট মাসে তিনি পাঁচবার তার নতুন
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। কারণ, প্রতিটি অ্যাকাউন্টই এক-দেড় মাসের মধ্যে
বিপরীতে ডি-অ্যাক্টিভ হয়ে যাচ্ছিল। অথবা হ্যাক হচ্ছিল। ন্যান্সি বলেন, শুধু
স্টেজ শো দিয়ে নয়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও আমি প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার
হচ্ছি। যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, একটি অ্যাকাউন্ট/
ফ্যানপেইজ সাজাতে কতটা সময় এবং শ্রম লাগে। কত কিছু জমানো থাকে এক একটি
অ্যাকাউন্টে। অথচ আমি প্রায় প্রতিমাসে একটি করে অ্যাকাউন্ট খুলছি। এটাই মনে
হয় এখন আমার পেশা! এ নিয়ে মানুষের কাছে আমি বিরক্তি এবং হাসির পাত্র হয়ে
দাঁড়াচ্ছি। অনেকে ফেইক আইডি ভেবে আমাকে একসেপ্টও করছেন না! ন্যান্সি আরও
বলেন, শুধু কি তাই? ছয় মাস আগেও ‘ন্যান্সি’ নাম দিয়ে সার্চ দিলে অসংখ্য
ভুয়া কিংবা ভক্তদের বানানো ফেসবুক আইডি দেখা যেত। আর এখন সার্চ দিয়ে দেখুন,
বড় জোর একটি-দু’টি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাবেন। এবং সেগুলোর বয়স বড়জোর এক-দেড়
মাস। তাহলে পুরো ঘটনার সারমর্ম কি? আপনারাই বলুন। আমার তো মনে হচ্ছে দু’দিন
পরে দেশ থেকেই আমাকে পালিয়ে যেতে হবে। কারা যেন আমার প্রতিটি রাস্তা ক্রমশ
আটকে দিচ্ছে। আমি চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। আমার সাজানো জীবনটাকে নিয়ে
যারাই এমনটা করছেন তাদের কাছে হাতজোড় করে বলছি, প্লিজ আমাকে এবার ক্ষমা
করুন। এতটা নির্দয় হবেন না। আমাকে আমার মতো বাঁচতে দিন।